প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের ৩৪ হাজার পদ শূন্য

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফাঁকা প্রধান শিক্ষকের পদ। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ৬৫ হাজারের বেশি অনুমোদিত প্রধান শিক্ষক পদের মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি শূন্য। অর্থাৎ প্রায় ৫২ শতাংশ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। শুধু প্রধান শিক্ষকই নয়, সহকারী শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক পদ ফাঁকা। শিক্ষকের অভাবে শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

 

মামলা, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা, নিয়োগ পরীক্ষায় দেরি, পদোন্নতিতে ধীর গতির কারণে এ সংকট দীর্ঘ হচ্ছে। এমনিতেই ঠিকমতো পড়াশোনার অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি নিয়ে ওপরের শ্রেণিতে ওঠে। এর মধ্যে বিদ্যমান শিক্ষক সংকট এ সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ জন্য সংকট নিরসনে তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের করা বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির (এপিএসসি) তথ্য বলছে, দেশে এখন মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় এক লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। সরকারি-বেসরকারি সব মিলিয়ে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই কোটি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে এক কোটির মতো।

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত সপ্তাহের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ৬৫ হাজার ৪৫৭টি। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১০৬টি পদ শূন্য। এছাড়া সারা দেশে সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৩টি। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৫৩৬টি পদ শূন্য।

 

প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদগুলোর মধ্যে ১৩ হাজার ৬৭৫টি পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে শিক্ষকদেরই একটি পক্ষ মামলা করেছিলেন। এ নিয়ে স্থগিতাদেশ থাকায় পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়টি সমাধানের জন্য তারা খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। চাকরিতে কোটার বিষয়ে গত বছরের সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগবিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এটি হয়ে গেলে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগবিধিটি এখন সরকারি কর্ম কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেখানে দেরি হচ্ছে।

 

এদিকে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানিয়েছে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

 

উল্লেখ্য, এতদিন ধরে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে ৬০ শতাংশ নারী কোটাসহ বিভিন্ন ধরনের কোটা ছিল। কিন্তু গত বছর সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগে নতুন কোটা নির্ধারণ করে সরকার। নতুন এই নিয়মে সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটার ভিত্তিতে। এখন সেই বিষয়টি প্রাথমিকর নিয়োগ বিধিতেও যুক্ত করা হচ্ছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আন্দোলন কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না : রিজভী

» হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেন নুরুল হক নুর

» দোহায় তৌহিদ হোসেন-ইসহাক দার বৈঠক

» বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত ঢাকা

» যমুনা অভিমুখে প্রাথমিক শিক্ষকরা, পুলিশের জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

» জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে: আসিফ মাহমুদ

» নবীর আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করে জীবন গঠন হবে ….. জেলা প্রশাসক নরসিংদী 

» ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের উত্তরা ক্যাম্পাসে ইয়াং লার্নার ইংলিশ লার্নিং সেন্টার-এর নতুন শাখা চালু করল ব্রিটিশ কাউন্সিল

» ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর অধীনে ব্র্যাক ব্যাংকের দেশব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা প্রোগ্রাম আয়োজন

» নওগাঁয় ডিবি পুলিশের অভিযানে মাদক কারবারি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ আটক ৩

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের ৩৪ হাজার পদ শূন্য

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফাঁকা প্রধান শিক্ষকের পদ। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ৬৫ হাজারের বেশি অনুমোদিত প্রধান শিক্ষক পদের মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি শূন্য। অর্থাৎ প্রায় ৫২ শতাংশ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। শুধু প্রধান শিক্ষকই নয়, সহকারী শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক পদ ফাঁকা। শিক্ষকের অভাবে শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

 

মামলা, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা, নিয়োগ পরীক্ষায় দেরি, পদোন্নতিতে ধীর গতির কারণে এ সংকট দীর্ঘ হচ্ছে। এমনিতেই ঠিকমতো পড়াশোনার অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি নিয়ে ওপরের শ্রেণিতে ওঠে। এর মধ্যে বিদ্যমান শিক্ষক সংকট এ সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ জন্য সংকট নিরসনে তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের করা বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির (এপিএসসি) তথ্য বলছে, দেশে এখন মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় এক লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। সরকারি-বেসরকারি সব মিলিয়ে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই কোটি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে এক কোটির মতো।

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত সপ্তাহের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ৬৫ হাজার ৪৫৭টি। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১০৬টি পদ শূন্য। এছাড়া সারা দেশে সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৩টি। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৫৩৬টি পদ শূন্য।

 

প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদগুলোর মধ্যে ১৩ হাজার ৬৭৫টি পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে শিক্ষকদেরই একটি পক্ষ মামলা করেছিলেন। এ নিয়ে স্থগিতাদেশ থাকায় পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়টি সমাধানের জন্য তারা খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। চাকরিতে কোটার বিষয়ে গত বছরের সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগবিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এটি হয়ে গেলে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগবিধিটি এখন সরকারি কর্ম কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেখানে দেরি হচ্ছে।

 

এদিকে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানিয়েছে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

 

উল্লেখ্য, এতদিন ধরে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে ৬০ শতাংশ নারী কোটাসহ বিভিন্ন ধরনের কোটা ছিল। কিন্তু গত বছর সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগে নতুন কোটা নির্ধারণ করে সরকার। নতুন এই নিয়মে সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটার ভিত্তিতে। এখন সেই বিষয়টি প্রাথমিকর নিয়োগ বিধিতেও যুক্ত করা হচ্ছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com